সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অনলাইন জগতে AI বা (Artificial Intelligence) এক বিশাল বিপ্লব নিয়ে এসেছে। কিছুদিন পূর্বে মানুষ যে কাজ করত অনেক সময় নিয়ে, সেই কাজ AI করে দেয় মাত্র কয়েক সেকেন্ডে।
AI বা (Artificial Intelligence) হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ন এক রোবট। AI এমন এক প্রযুক্তি যেটা মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তা ভাবনার অনুকরন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করতে পারে।
AI (Artificial Intelligence) প্রধানত তিন প্রকার:
এটি নির্দিষ্ট একটি কাজ বা দক্ষতার জন্য ডিজাইন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুগল সার্চ ইঞ্জিন, ফেস রিকগনিশন সিস্টেম, এবং ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো ন্যারো এআই ব্যবহার করে। এটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য অত্যন্ত দক্ষ, কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিমত্তা দেখাতে পারে না।
এই এআই মানুষের মতো সব ধরনের বুদ্ধিমত্তার কাজ করতে পারে। এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে এবং বাস্তবে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি। জেনারেল এআই মানুষের মতো শেখার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা রাখে।
এটি এমন এক ধরণের এআই, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে। এটি তাত্ত্বিকভাবে মানুষের থেকে অনেক বেশি দ্রুত ও সঠিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সুপার এআই এখনো কল্পনা বা গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে এবং বাস্তবে তৈরি হয়নি।
এআই (Artificial Intelligence) এর ইতিহাস বেশ পুরনো এবং একাধিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এআইয়ের ধারণা প্রথম আসে প্রাচীন গ্রিসের মিথোলজিতে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আধুনিক এআই গবেষণা শুরু হয় ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
১৯৫০ এর দশকে ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং এআইয়ের ধারণাকে আরও সংহত করেন। তিনি “টুরিং টেস্ট” এর ধারণা দেন, যেখানে একটি মেশিন মানুষের মতো আচরণ করতে পারলে সেটিকে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে।
১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজে একটি সম্মেলনে এআইকে প্রথম স্বতন্ত্র গবেষণা ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত করা হয়। জন ম্যাকার্থি, মার্ভিন মিনস্কি, অ্যালান নিউয়েল এবং হার্বার্ট সাইমন এর মতো বিজ্ঞানীরা এ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। এখানে “Artificial Intelligence” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়।
১৯৬০/৭০ এর দশকে এই সময়ে এআই গবেষণায় কিছু অগ্রগতি হয়, যেমন প্রাথমিক প্রোগ্রাম ও অ্যালগরিদম তৈরি করা। এলিজা এবং শ্রডল এর মতো প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়, যা মানুষের ভাষা বোঝার এবং প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সক্ষমতা দেখায়।
তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এআই গবেষণায় কিছুটা স্থবিরতা আসে।
এ সময়ে এক্সপার্ট সিস্টেম তৈরি করা হয়, যা বিশেষজ্ঞের মতো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম ছিল। এই ধরনের সিস্টেমগুলো ব্যবসা, চিকিৎসা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। এ সময় এআই গবেষণা পুনরায় গতি পায়।
ডিপ লার্নিং এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক এর অগ্রগতি ঘটে। ১৯৯৭ সালে আইবিএম এর ডীপ ব্লু কম্পিউটার শচিন গ্র্যান্ডমাস্টার গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করে, যা এআই গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি হিসাবে দেখা হয়।
বর্তমান সময়ে মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক এর মতো উন্নত প্রযুক্তির কারণে AI উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো এআই ভিত্তিক পণ্য ও পরিষেবা তৈরি করেছে।
চ্যাটবট, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (যেমন, সিরি, অ্যালেক্সা), এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এখন এআই ভিত্তিক প্রযুক্তির উদাহরণ।
এআই বর্তমানে মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও বাড়তে থাকবে।