এক সময়ে একটা কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজন হত একটি বড় ঘর। সেই বিশাল আকারের কম্পিউটার এখন ল্যাপটপে এসে ঠেকেছে, যেটা সহজেই আমরা আমাদের কোলে রাখতে পারি। সেই কারণেই একে বলা হয় ‘ল্যাপটপ’।

ল্যাপটপ অনেকের কাছে প্রিয় বস্তু হলেও, অনেকের মনে ল্যাপটপ থেকে বিকিরণের কারণে শারীরিক ক্ষতির ভয় কাজ করে। সত্যিই কি ল্যাপটপ থেকে কোনো ক্ষতিকর বিকিরণ নিঃসৃত হয়? আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ল্যাপটপের বিকিরণ কি?

ল্যাপটপ থেকে একাধিক ধরনের বিকিরণ নির্গত হয়। প্রথমত, ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে যে আলো বের হয়, সেটাও এক ধরনের বিকিরণ, যাকে বলা হয় বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।

এছাড়াও, ল্যাপটপের ব্যবহারের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং এতে অবলোহিত বিকিরণ (ইনফ্রারেড রেডিয়েশন) তৈরি হয়। তাপের কারণে ল্যাপটপের বিভিন্ন অংশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

তাছাড়া ল্যাপটপের ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথের জন্যও রেডিও তরঙ্গ নির্গত হয়।

ল্যাপটপের বিকিরণে ক্ষতির মাত্রা!

যদিও ল্যাপটপ থেকে বিকিরণ নির্গত হয়, এই বিকিরণগুলোর তীব্রতা এত কম যে তা মানবদেহের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর নয়। ল্যাপটপ থেকে যে সব বিকিরণ বের হয়, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ডিভাইস থেকে নির্গত বিকিরণের তুলনায় প্রায় একই। উদাহরণস্বরূপ, আপনার টিভি, মোবাইল ফোন, কিংবা রিমোট কন্ট্রোল থেকে যে বিকিরণ বের হয়, সেটাও একই ধরনের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ।

ল্যাপটপের দৃশ্যমান আলো ও ইনফ্রারেড বিকিরণ!

ল্যাপটপের পর্দা থেকে নির্গত দৃশ্যমান আলো বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের অংশ। মোমবাতি, আগুন, লাইট বাল্ব থেকেও এই ধরনের বিকিরণ নির্গত হয়। এছাড়াও, ল্যাপটপের তাপীয় বিকিরণ, যা ইনফ্রারেড রশ্মি নামে পরিচিত, তা প্রতিটি তাপমাত্রাযুক্ত বস্তু থেকেই বের হয়।

তাই ল্যাপটপের এই ধরনের বিকিরণ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ল্যাপটপের রেডিও তরঙ্গ ও ব্লুটুথ বিকিরণ

ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথের জন্য নির্গত রেডিও তরঙ্গও তেমন ক্ষতিকর নয়। আমরা প্রতিনিয়ত রেডিও, মোবাইল ফোন, ওয়াইফাই, টেলিভিশনের রিমোট ইত্যাদি ডিভাইসের মাধ্যমে এই ধরনের বিকিরণের সংস্পর্শে আসি। তাছাড়া, এই রেডিও তরঙ্গের কম্পাংক এত কম যে মানবদেহের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নেই।

ল্যাপটপের পারমাণবিক বিকিরণ!

ল্যাপটপের কিছু যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত পারমাণবিক আইসোটোপগুলোর কারণে সামান্য পরিমাণে নিউক্লিয়ার বিকিরণও হতে পারে। কিন্তু এই বিকিরণ এতই দুর্বল যে তা আমাদের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের চারপাশে এমনকি আমাদের দেহেও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সব সময়ই থাকে, যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রভাব ফেলে না।

ল্যাপটপের ক্ষতিকর বিকিরণ কোনগুলো?

যেসব বিকিরণ উচ্চশক্তির, সেগুলোই মূলত মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চশক্তির বিকিরণ যেমন অতিবেগুনি রশ্মি (UV), এক্স-রে, এবং গামা রশ্মি রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে ফেলে, যা ক্যান্সার সহ অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তবে ল্যাপটপ বা সাধারণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে এই ধরনের বিকিরণ নির্গত হয় না।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ল্যাপটপ থেকে নির্গত বিকিরণ মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। আমরা প্রতিদিনই এই বিকিরণগুলোর সঙ্গে পরিচিত, কিন্তু সেগুলোর কম্পাংক এবং তীব্রতা এতই কম যে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

0%
0%
  • User Ratings (1 Votes)
    9.5
Share.
Exit mobile version